মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সমমনা অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানাচ্ছে। এটা সবচেয়ে ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অত্যাবশ্যক। আমরা একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখতে চাই। এখন থেকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেয়া হবে – তার ওপরেই নির্ভর করছে ভোটাররা তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে কিনা এবং সব ভোটই গণনার মধ্যে আসবে। প্রস্তুতিটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়।
তিনি বলেন, সদ্য সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা তিনি চান না। আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই কথা বলেছেন। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হবে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে বার্নিকাট প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইএমকে সেন্টারে ‘ডিকাব টক’ নামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের মানবিক সহায়তা দেয়া এবং প্রকৃতপক্ষে কি ঘটছে তা সরেজমিনে দেখতে রাখাইনে প্রবেশের সুযোগ আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার সুযোগ কাউকে দেয়া হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র রাখাইন পরিস্থিতির ওপর পূর্ণাঙ্গ, আনুষ্ঠানিক ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছে। গত ৯ অক্টোবর বার্মার সীমান্তরক্ষীদের চৌকি লক্ষ্য করে চালানো আক্রমনেরও নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে রোহিঙ্গা ইস্যু সুরাহার বিষয়টি শর্ত হিসাবে জুড়ে দেয়ার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো আহ্বান জানিয়েছিল কিন্তু তা করা হয়নি কেন জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৭ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আদেশনামায় সই করেন। সেই সময় মাঠ পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। নতুন সরকারও মানবাধিকার রক্ষার অনুকূলেই অবস্থান নিয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সাথে সাথে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির অবসান নয়। মিয়ানমারের সবার জন্য মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সুচি সরকারের সাথে কাজ করে যাবে।
রাখাইন ইস্যুতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির ভূমিকার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বার্নিকাট বলেন, মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, যা আমরা বেশ ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছি। মানবাধিকারসহ সার্বিক ইস্যুতে বার্মার সাথে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছে। আমরা পরিস্থিতি গভীর ও সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। রাখাইনের বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে প্রবেশ করেছে। তাই তাদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশাও বেড়েছে।
রাষ্ট্রদূত জানান, রাখাইন পরিস্থিতির সুরাহায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সমমনা দেশগুলোর সাথে কথাবার্তা বলছি।
রাজধানী ঢাকায় হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারে নেয়া পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হওয়ার মত বিলাসিতা আমরা করতে পারি না। কেননা আমাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। অসতর্ক মুহূর্তের সুযোগ নেয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা অপেক্ষা করছে। ব্রাসেলস ও প্যারিসে চালানো দ্বিতীয় দফা সন্ত্রাসবাদী হামলা থেকে আমরা এ অভিজ্ঞতা পেয়েছি। বাংলাদেশ এখনো সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত ও বিশ্বাসযোগ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ দমন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য কঠিন একটি কাজ। এখন অন্য কোনো দূর দেশে বসেই একাকিত্বে ভুগতে থাকা কোনো যুবককে চরমপস্থায় উজ্জীবিত করা সম্ভব। বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ চিত্রের অংশ। আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা আমরা বিনিময়ে উৎসাহিত করি। কেননা সেটা পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে একই ধরনের ঘটনা প্রতিহত করে সহায়ক হতে পারে।
সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের পরিবর্তে হত্যার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বার্নিকাট বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে আটককৃতরাই ঘটনার ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো তথ্য দিতে পারে। তাই তাদের হত্যার সাথে সাথে তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও হারিয়ে যায়। কারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, কোথা থেকে অস্ত্র বা অর্থ সরবরাহ এসেছে – এসব কিছুই প্রকাশ্যে আসে না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে অভিযান পরিচালনায় অনেক সময় সন্ত্রাসীদের জীবিত ধরাটা খুবই কঠিন। কেননা আইএসের দীক্ষায় দীক্ষিতরা নিজেদের জীবন দিয়েও অন্যের প্রাণহানী ঘটায়।
তিনি বলেন, অভিযানের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সন্ত্রাসীদের জীবিত ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- তাদের বিচারের মুখোমুখী করা। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটলে তার তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়, যাতে মানুষ বুঝতে সক্ষম হয় সেই মুহূর্তে গুলি করা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে অন্য কোনো উপায় ছিল না।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যত গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিগত ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ও মূল্যবোধ ক্ষমতার পালাবদলের সাথে খুব একটা পরিবর্তন হয় না। প্রতিটি প্রেসিডেন্টের নিজের অগ্রাধিকার থাকে। তবে গণতন্ত্রের ক্ষমতার উৎসটা কিন্তু জনগণ।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিচারবিভাগ, কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের নেতৃত্ব একই দলের হাতে থাকলেও সবাই যে সব বিষয়ে একমত হবেন- এমন কোনো কথা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের অনুসৃত নীতি ও অগ্রাধিকার সম্পর্কে জানতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বারাক ওবামাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করে। আমরা চাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র আসুক এবং ভিসার মেয়াদ শেষে নিজ দেশে ফিরে যাক। পর্যটন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের উৎস। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সব দেশের শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানায়। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করছে।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর হাওয়াইতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে অন্যান্য ইস্যুর মধ্যে লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশের সাথে টিকফা বৈঠক অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
The post স্বাধীন শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চায় যুক্তরাষ্ট্র appeared first on Durnitynews24.com : : দুর্নীতি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম.